১৪টি দ্বীপের শহরে | তালহা যুবায়ের | ২য় পর্ব

  যাইহোক, সুইডেন থেকে ফিরছি, স্টকহোম থেকে কোপেনহেগেন হয়ে বার্গেন। ৫ দিনের সফর শেষ হচ্ছে। ২২ থেকে ২৭ শে ডিসেম্বর। সুইডিশ সংগঠন নরডিক-বাংলা স...

 


যাইহোক, সুইডেন থেকে ফিরছি, স্টকহোম থেকে কোপেনহেগেন হয়ে বার্গেন। ৫ দিনের সফর শেষ হচ্ছে। ২২ থেকে ২৭ শে ডিসেম্বর। সুইডিশ সংগঠন নরডিক-বাংলা সংস্কৃতি কেন্দ্র এর কালচারাল ইভেন্টের কিঞ্চিৎ নির্দেশনা ও কিঞ্চিৎ অভিনয়ের প্রয়োজন ছিলো। তার প্রস্তুতি ও বাস্তবায়নে গিয়েছে ২৫ তারিখ পর্যন্ত। কাল ঘুরে বেড়িয়েছি স্টকহমের প্রানকেন্দ্রে। আগে থেকেই আবহাওয়া পূর্বাভাসে জানতাম যে আকাশ প্রচুর মেঘলা তথা অন্ধকার দিনই থাকবে। যেটা কিনা এই উত্তরের শীতের দিনগুলোর ছোট দিন আর বড় রাতওয়ালা সময়ের আদীম বৈশিষ্ট্য। সকাল হচ্ছিলো ৮.৪৫ এর দিকে, নরওয়ের বার্গেনের থেকে ঘন্টাখানেক আগে, কিন্তু এখানে আবার সন্ধ্যাও নেমে যায় ২.৪৫ এর পর পরই। কিন্তু মেঘের কারণে এমনিতেই শেষ বিকেলের অন্ধকার হয়েছিলো। এছাড়া তাপমাত্রা ০° হলেও বাতাসের বেগের কারণে ভালোই ঠান্ডা লাগছিলো। বের হতে হতে ততক্ষণে ১০ টা পার হয়ে গেছে। এরপর সকালের নাস্তা করার জন্য এ কদিনে আপন হয়ে যাওয়া নর্ডিক বাংলার পরিচালক নিজাম ভাইয়ের কল্যানে বহুদিনের আকাংখিত সুশির বুফে খেয়ে রওনা দিলাম। যদিও যার আমন্ত্রন ছিলো মূল, সেই হেলালী সাহেব তার ভায়রাকে নিয়ে তখন ব্যস্ত পরিবারকে সময় দিতে, বিবাহ এখনো ততটা পুরাতন হয়নি বলে কথা। এতদিনে আমার আস্তানা হয়ে উঠা সিস্তা থেকে মেট্রোতে চড়ে টি সেন্ট্রাম পার হয়ে কুন্দেসস্তপেজ। পথের মাঝে সেই চীরচেনা শীতল, ম্যাড়মেড়ে উত্তরে ধূসর দৃশ্যেপট, মাঝখানে হঠাৎ হঠাৎ করে দেখতে পাওয়া পাতায় ভরা পাইনগাছ। অধিকাংশ রাস্তা মাটির নিচে হওয়ায় তেমন প্রকৃতি দেখা হয়নি পথে। পৌঁছে কয়েক মিনিটি হেটেই পৌঁছে গেলাম সুইডেনের প্রানকেন্দ্রে। নদীকে শাসন করে গড়ে উঠেছে সুইডেনের ঐতিহ্যবাহী পার্লামেন্ট, যাকে সুইডিশে বলা হয় রিকসদাগ (Riksdag)। নির্মান কাজ চলেছে সেই আঠারোশো সাল থেকে উনিশশত পাঁচ পর্যন্ত। পাশেই রাজ পরিবারের প্রাসাদ আর প্রধানমন্ত্রি এবং মন্ত্রি পরিষদের নানা ঢংয়ের অফিসে প্রাসাদ ঘিরে রয়েছে। সোদারস্ট্রম নদীটাকে কি অসাধারণ ভাবে দুই পাশ দিয়ে বয়ে নিয়ে গড়ে তুলে মহা স্থাপত্য। এই নদীটা লেক মলারেনের সাথে সংযোগ করে বাল্টিক সাগরের সাথে গিয়ে মিলেছে। পুরো প্রসাদগুলো যেন অনেকটা ভাসমানভাবেই দাড়িয়ে আছে। কারণ এর ঠিক নিচ দিয়েও পানির একটা ছোট ধারা বয়ে চলেছে। হুমায়ুন ফরিদী নাকি বলেছিলেন তার নিকট প্রিয় শহর স্টোকহোম, কারণ শহরটি ৭টা ব্রিজ দিয়ে একে অন্যের সাথে জোড়া লাগানো। আমি পার্লামেন্টের সামনে দাড়িয়ে ঠিক ৪ টা ব্রিজ দেখতে পাচ্ছিলাম। সুইডেনের ৩য় বৃহত্তম লেক মলারেনের মাঝে ১৪ টি ছোট ছোট দ্বীপের সমষ্টি হলো স্টকহোম। 


শীতের ছোট আর অন্ধকার উত্তরে দিনগুলোর শেষ আলোয় ক্রিসমাসের ছুটি কাটাচ্ছে কিছু মানুষ। কয়েকজন মাছ ধরছে প্রচন্ড ঠান্ডাকে গায়ে না মেখেই, কাউকে মাছ পেতে দেখেনি তবে শুনলাম এখানে নাকি স্যালমন পাওয়া যায় প্রচুর, কারণ যেহেতু বাল্টিক সাগরের একটা অংশ এ নদী, পানির ধারাকে গেট, ব্রিজ ও নানা স্থাপনা দিয়ে নিয়ন্ত্রন করায় কোথাও প্রচুর স্রোত, সাধারণত স্যালমন চলে আসে এমন স্রোতে । তাপমাত্রা জিরো ডিগ্রী হলেও বাতাসের কারণে মনে হচ্ছিলো অনেক কম। তাছাড়া বার্গেনের চেয়ে স্টকহোমে একই তাপমাত্রায় কিছুটা বেশি শীতই অনুভূত হচ্ছিলো। তবে অদ্ভুত অথবা ব্যাপার হলো আমাদের রাস্তা, ব্রিজ সবকিছুর নিচেই বিশাল ফাপা অংশ। কারণ নিচে রয়েছে কয়েকতলা পর্যন্ত বিশাল স্থাপনা। নরওয়েতে থেকে রাস্তা, টানেল এসবে অভ্যস্ত হলেও বিশালতার কারণে অনেকটা অবাকই লাগলো। কে জানে হয়তো নিরাপত্তার জন্য বিশাল কোন অস্ত্রা ভান্ডারও লুকানো আছে। একটু পাশ ঘুরে বড় ব্রিজটাতে যাওয়ার সময় দেখলাম পার্লামেন্ট কমপ্লেক্স তথা আমাদের রাস্তার অনেক নিচ দিয়ে দুটো বিশাল ফাঁপা, দেখতে মনে হয় হয়তো শুধুই কংক্রিটের দেয়াল অথচ বিশাল কমপ্লেক্সের মাঝখানে নদীর উপর দিয়ে কাঁচঘেরা ছোট ব্রিজ। ঠিক ওই জায়গা দিয়ে কোন নৌযান চলা নিষেধ। দেখলাম গেট নিয়ন্ত্রণ ও কোন নৌযান ঢুকলে তা বন্ধ করার জন্য খালের মত প্রবাহের দুইপাশে লোহার দুটো বাহু অপেক্ষা করছে। এরপর চারদিক ঘুরে সব থেকে বড় ব্রিজটার উপরে দাড়ালাম। ঠিক বার্গেনের সেন্ট্রামের লেকের মত পানিতে ঢেউয়ের সাথে সাথে দুলছে সাদা ধবধবে রাঁজহাস, পানকৌড়ি মত হাসগুলো, তিতির পাখিদের মত কোন এক প্রকাশ দ্বিচারী পাখি। এই দৃশ্যটা মূলত নানা লেক, ফিওর্ড আর সমুদ্রে ঘেরা ঠান্ডা স্ক্যান্ডডেনিভিয়ার পরিচিত দৃশ্য। ততক্ষণে অন্ধকার হয়ে আসছে চারপাশ। চারদিক থেকে গথিক আর লুথারিয়ান তথা প্রোটেস্টান্ট ঢংয়ে নির্মিত গির্জাগুলোর সুউচ্চু চূড়াগুলো উঁকি দিচ্ছিলো। ৪-৫ টা চার্চ চোখে পরে গিয়েছিলো কতক সময়ের মধ্যেই। হয়তো আভিজাত্য আর শাসকদের গৌরব বহন করছে চার্চগুলো। ঠিক যেমন মুসলিম শাসকরা তৈরি করেছে সুউচ্চ মিনারওয়ালা নানা ঢংয়ের মসজিদগুলো অথবা ভারতবর্ষের হিন্দু রাজাদের তৈরি মন্দীরগুলো। 


নৌ ক্রুজের জন্য অপেক্ষমান নানা আকার আর ঢংয়ের জাহাজগুলো যাত্রি অথবা সিজনের অভাবে ঘাট দাড়িয়ে দুলছে। এরই মাঝে আমাদের ডিঙ্গি নৌকার মত লম্বা কিন্তু ছাউনিওয়ালা সাদা একটা বোট ছেড়ে গেলো সন্ধ্যার নদীতে প্রতিফলিত হওয়া নীল আলোতে। নদী এবং লেকের একটা অংশকে যেহেতু নানাভাবে শাসন করে গড়ে উঠেছে এই অংশ, সেহেতু ব্রিজে দাড়ালে অথবা পুরো শহরে দাড়ালে চারদিকের জলে উঠা আলোয় ঝিকমিক করে জানান দেয় দর্শককে। ক্রিসমাস এর সময় হওয়া চারদিকে শুধু আলোর ঝলকানি। দুরের নদীর একটা তীরের শক্ত কংক্রিটের দেয়ালের কয়েকশো মিটার ধরে ঝিকঝিক করছে মরিচ বাতি। মনে হয় হাজার হাজার জোনাকি পোকা ধরে রেখেছে বাবুইয়ের বাসার দেয়ালে। পাশের পার্কটার ফুটপাতে ফানুশের মত বৈদ্যুতিক বাতি চলে গেছে সোজা লাইন ধরে। মনে হয় পুরোনো দিনের সেই হ্যাজাক লাইটগুলো জালিয়ে রেখেছে কেউ। ঠান্ডা আর নদীর খোলা বাতাসে ততক্ষণে হাত জালা পোড়া শুরু করেছে ছবি আর ভিডিও করায়। লাল হয়ে ফুলে গিয়েছে দেখলাম। ততক্ষনে ফেরার জন্য ডাকাডাকি শুরু হয়ে গেছে ৷ পকেটের গরমের সন্ধানে হাত ঢুকিয়ে হাটতে লাগলাম কুংসত্রাদগরদেন (Kungstrrden) মেট্রো স্টপেজের দিকে।

স্টকহোম থেকে কোপেনহেগেন ও বার্গেন 
 ২৭শে নভেম্বর ২০২২ 
(চলবে)

COMMENTS

Name

Article,4,POEM,5,ভ্রমন কাহিনী,4,
ltr
item
T A L H A J U B A E R: ১৪টি দ্বীপের শহরে | তালহা যুবায়ের | ২য় পর্ব
১৪টি দ্বীপের শহরে | তালহা যুবায়ের | ২য় পর্ব
https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEgkwhtMh9ed6B2dlogqgYh81zEnEaN5xg1GD0Q-ftkEvBM-VZGkyhDK6JdpMb5N7W3bnXyQ_wiRiljvK0q-k2uhcfuKpIlB-8VjulI2sqQ23ejKesPSJl-3z4CvQ-GZoTDO3KICUXm2qY9BzQNIS0Grt1I3HgSHY53ed2_Pak9Nxrl1-kMlxGwILVZ1/w640-h360/dip02.jpg
https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEgkwhtMh9ed6B2dlogqgYh81zEnEaN5xg1GD0Q-ftkEvBM-VZGkyhDK6JdpMb5N7W3bnXyQ_wiRiljvK0q-k2uhcfuKpIlB-8VjulI2sqQ23ejKesPSJl-3z4CvQ-GZoTDO3KICUXm2qY9BzQNIS0Grt1I3HgSHY53ed2_Pak9Nxrl1-kMlxGwILVZ1/s72-w640-c-h360/dip02.jpg
T A L H A J U B A E R
https://www.talhajubaer.com/2023/02/blog-post.html
https://www.talhajubaer.com/
https://www.talhajubaer.com/
https://www.talhajubaer.com/2023/02/blog-post.html
true
3977557795929158617
UTF-8
Loaded All Posts Not found any posts VIEW ALL Readmore Reply Cancel reply Delete By Home PAGES POSTS View All RECOMMENDED FOR YOU LABEL ARCHIVE SEARCH ALL POSTS Not found any post match with your request Back Home Sunday Monday Tuesday Wednesday Thursday Friday Saturday Sun Mon Tue Wed Thu Fri Sat January February March April May June July August September October November December Jan Feb Mar Apr May Jun Jul Aug Sep Oct Nov Dec just now 1 minute ago $$1$$ minutes ago 1 hour ago $$1$$ hours ago Yesterday $$1$$ days ago $$1$$ weeks ago more than 5 weeks ago Followers Follow THIS PREMIUM CONTENT IS LOCKED STEP 1: Share to a social network STEP 2: Click the link on your social network Copy All Code Select All Code All codes were copied to your clipboard Can not copy the codes / texts, please press [CTRL]+[C] (or CMD+C with Mac) to copy Table of Content