মাহে রমাদান, মুমিন জীবনে এক প্রশান্তির নাম, এক রহমতের নাম, এক ঐশী আলোকছটা আর পবিত্র আনন্দে নেচে উঠার নাম। তাইতো গীতিকার তফাজ্জল হোসাইন খান ম...
মাহে রমাদান, মুমিন জীবনে এক প্রশান্তির নাম, এক রহমতের নাম, এক ঐশী আলোকছটা আর পবিত্র আনন্দে নেচে উঠার নাম। তাইতো গীতিকার তফাজ্জল হোসাইন খান মনের আনন্দ মিশিয়ে লিখেছিলেন "আকাশে মেঘের দেশে বাঁকা চাঁদা মুচকি হাসে আনন্দে নেচে উঠে তাইতো সবার প্রাণ নাজাতের বাণী নিয়ে এলো রে রমজান"।
বছর ঘুরে আবারো রমজান কড়া নাড়ছে আমাদের দরজায়। হয়তো হ্যাপি রমাদান লিখে ফেসবুকে পোস্ট করা বা নিজের অর্গানাইজেশনের পক্ষ থেকে রমাদান পোস্টার, ক্যালেন্ডার বের করা কিংবা কয়টা ইফতার পার্টি করবো সবগুলো সার্কেল মিলিয়ে অথবা ঈদে বাচ্চা, ভাই-বোন, বাবা-মা, স্ত্রীর জন্য কি কি মার্কেট করবো তাও ঠিক করে ফেলেছি আমরা কিন্তু যেই নাজাতের পবিত্র বানী নিয়ে, মুক্তির বারতা নিয়ে এসেছে রমাদান, তার জন্য কি পর্যাপ্ত প্রস্তুতি কিংবা পরিকল্পনা নিতে পেরেছি আমরা? আচ্ছা, আপনার হয়তো মনে হতেই পারে যে প্রস্তুতি কেনই বা নিতে হবে? আল্লাহ হাদীসে কুদসিতে সাওম বা রোজা নিয়ে বলেন “ সাওম আমার জন্য এবং আমিই এর প্রতিদান দিবো”(১)। যেখানে আল্লাহ নিজে প্রতিদান দিতে চেয়েছেন তার জন্য কি একটুও প্রস্তুতি নিবো না আমরা ? অথচ সাধারন একটা বিয়ের অনুষ্ঠান অথবা পরীক্ষার আগে কতগুলো দিন ধরে ঘুম হারাম হয়ে যায় প্রস্তুতির জন্য অথচ এটি মানব জীবনের সবথেকে বড় পুরস্কারের সম্ভাবনার হাত বাড়াচ্ছে। চলুন দেখি রাসূল (সঃ) কি করেছেন।
”আয়েশা (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) শাবান মাসে লাগাতার রোজা রাখতেন, আমরা বলতাম, তিনি আর রোজা ছাড়বেন না। আবার তিনি এভাবে রোজা ছাড়তেন, আমরা বলতাম, তিনি আর রোজা রাখবেন না। আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে রমজান ছাড়া কোনো পুরো মাসের রোজা পালন করতে দেখিনি এবং শাবান মাসের চেয়ে কোনো মাসে বেশি রোজা পালন করতে দেখিনি।”(২)
তাহলে আয়েশা (রাঃ) এর হাদীস আমাদের বলে গেলো যেই প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ) সারা বছরই সর্বোচ্চ ইবাদত আর বিরতি দিয়ে দিয়ে রোজা রেখে অভ্যস্ত তিনি পর্যন্ত রোজার প্রস্তুতিকে কতটা গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন। সুতরাং ভুল করতে করতে অন্তরে কালিমা লেপন করা আমাদের কি করা উচিত তা তো সকলেই বুঝতে পারছি। আমাদের সেই বুঝতে পারাকে বাস্তবায়ন করতে উৎসাহ দিতেই গীতিকার বেলাল হোসাইন নূরী হৃদয়ের সব আবেগ দিয়ে লিখেন "সিয়াম এলো খুলে দাও তুমি দিল নিজেকে গোছাও তুমি আজ তিল তিল"। আমরা আধুনিক, পুঁজিবাদী ও স্যোস্যাল নেটওয়ার্কিংয়ে ব্যস্ত সময়ের মধ্যেও এ বছরের রমাদানকে কি করে ফজিলতপূর্ন ও বরকতপূর্ণ করে তুলতে পারি তার প্রস্তুতি, পরিকল্পনা ও আমলরে উপায় নিয়ে এগিয়ে যাবো।
আমরা প্রধানত ৩ টি ভাগে ভাগ করবো আমাদের আলোচনা:
ব্যক্তিগত প্রস্তুতি, পরিকল্পনা ও আমল
পারিবারিক প্রস্তুতি, পরিকল্পনা ও আমল
সামাজিক প্রস্তুতি, পরিকল্পনা ও আমল
ব্যক্তিগত প্রস্তুতি, পরিকল্পনা ও আমল
নিজেকে নিয়ে ভাবুন, প্রথমেই ভাবুন এটাই জীবনের শেষ রমজান, নিজের গুনাহ মাফ করে মহান আল্লাহর কাছে নিজেকে ঘনিষ্ঠ করে তোলার এই তো মহাসুযোগ। পিছনের রমজানে কি কি করতে চেয়েছেন কিন্তু করতে পারেন নি তার জন্য আল্লাহর পানাহ চেয়ে একটা তালিকা নোটপ্যাড, ডায়েরী অথবা মনে মনে সাজিয়ে ফেলুন। এবছরের কি কি করতে চান তা নিজের মত করে ভেবে নিন। আগের মত করে তালিকা করে নিন আল্লাহ ভরসা করে। এক্ষেত্রে স্লিপিং পেপার বা স্টিকি পেপারে পড়ার কিংবা ওয়ার্কিং টেবিলে লাগিয়ে নিলে ভালো। সেক্ষেত্রে ভুলে যাওয়ার সম্ভাবনা কম থাকবে। যা যা করা যেতে পারে...
প্রথমত পুরো শাবান মাস জুড়ে আল্লাহর প্রিয় রাসূল (সঃ) ও তার সাহাবীদের মত রোজা রাখার চেষ্টা করা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে সপ্তাহে দুটি সুন্নাহ রোজা যেমন সোমবার, বৃহ:বারের রোজা এবং আইয়্যামে বিজের (আরবি মাসের মাঝামাঝি সময়ে) রোজাগুলো অধিক সাওয়াবের হবে ইনশাআল্লাহ। (৩)
কুরআন তেলাওয়াত শুদ্ধ না হলে এ বছরই শুদ্ধ করে শেখার সংকল্প করে ফেলুন। অনলাইন, অফলাইনে অসংখ্য ফ্রি কুরআন প্রশিক্ষন কোর্স চলে রমজানকে কেন্দ্র করে। ব্যস্ততা থাকলেও ভর্তী হয়ে যান আল্লাহ ভরসা করে।
কুরআন অর্থসহ শেষ করতে পারেন অথবা কোন একটি/দুটি/নিজের মনমত অংশ তাফসিরসহ শেষ করার পরিকল্পনা নিতে পারেন।
কুরআনের ছোট ছোট সূরাগুলো অথবা যেকোন জায়গা পছন্দের বা সহজ মনে হয় এমন কিছু আয়াত নিয়মিত মুখস্তের চেষ্টা করা।
রাসূলের জীবনী বহুদিন আগে পড়া থাকলে অথবা না পড়া থাকলে আবার পড়ে ফেলার সংকল্প করে ফেলুন। আর-রাহিখুল মাখতুম, সীরাত ইবনে হিশাম অথরা স্বীকৃত যেকোন একটা পড়লেই হলো। অনলাইনেই পিডিএফ ও পাওয়া যায়।
প্রতিরাতে অন্তত ৮ রাকায়াত হলেও তারাবীহর চেষ্টা করা। মসজিদে জামাতে পড়তে পারলে তো ভালো তা না হলে কিংবা দেশের বাইরে যারা তারা বাসায় সবাইকে নিয়ে পড়ে ফেলুন। বিশ রাকাত পড়তে পারলে তো আলহামদুলিল্লাহ ।
প্রতি রাতে একবার হলেও নিভৃতে আল্লাহর কাছে ধর্ণা দেয়ার চেষ্টা করা।
স্যোস্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটগুলোতে প্রডাক্টিভ অথবা কার্যকর সময়ের বাইরে ব্রাউজ না করার চেষ্টা করা।
অন্য সময়ের মতই চোখ, কানের জিনা থেকে বেঁচে থাকার চেষ্টা করা। তবে রমজান যেহেতু বাকি ১১ মাসের জন্য প্রশিক্ষন সেহেতু ভুলবশত বা দূর্বলতাবশত ফেসবুক, ইউটিউব বা বাস্তব জীবনে চোখ বা কানের পবিত্রতার বাইরে যা হতো যেমন বিপরীত লিঙ্গের কলিগের সাথে অকারণে গল্প, অশ্লীল দৃশ্যসম্পন্ন বা পর্দা নষ্ট হয় এমন মুভি বা নাটকে ক্লিপ দেখা, অশ্লীলতা উসকে দেয় এমন গান শোনা ইত্যাদি থেকে নিজেকে সম্পুর্ণ বিরত রাখার চেষ্টা করা।
এর বদলে অন্য সময়ের চেয়ে বেশি কুরআন তেলাওয়াত, দেশি বিদেশী ইসলামী গান, আবৃ্ত্তি, ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ে লেকচার শোনা অথবা ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ে নির্মিত ক্লিপ দেখা যেতে পারে। যেটি হয়তো আপনার, আমার বাকি ১১ মাসের সাংস্কৃতিক অভ্যাসের মধ্যেও নিয়ে আসবে পরিশুদ্ধতা।
যেহেতু রমজানে সকল ইবাদতকে অনেক বেশি মর্যাদা দিয়ে থাকেন মহান আল্লাহ। তাই যাদের উপরে যাকাত ফরজ হয়েছে তারা যাকাত হিসেব করে যাকাতের খাতগুলো দেখে বা কোন বিজ্ঞ আলেমের সাথে পরামর্শ করে যেকোন এক,দুই জায়গাতে দেয়ার চেষ্টা করা। যাতে যাকাতের পরিমাণটা বেশি হয় এবং যে কোন খাতের জন্যই তা সঠিক পরিমানে কার্যকর হয়। যেমন যদি একজন অভাবী ব্যক্তিকে যাকাত দিলে সে যাতে পরবর্তীতে যাকাত না নিতে হয় এমন অবস্থায় জীবন চালাতে পারে তার ব্যবস্থা করা। তবে যাদের অনেক টাকা যাকাত হয় তাদের হিসেব ভিন্ন। এক্ষেত্রে কারো যাকাত কম হলে দুতিনজন মিলেও কাউকে স্বাবলম্বী করে দেয়ার ব্যবস্থা করা যেতে পারে তবে অবশ্যই বিজ্ঞ আলেমের পরামর্শ নিয়ে নিবেন।
যেকোন একটি নফল ইবাদত বা সুন্নাহকে সারা বছরের জন্য শুরু করে দেয়া কারণ যেহেতু আল্লাহ স্পেশাল কিছুকে পছন্দ করেন। মনে আছে বেলাল (রঃ) এর মসজিদে ঢুকে দু রাকাত নামাজ আদায় আল্লাহর কাছে কত পছন্দনীয় হয়েছিলো। তেমনি হতে পারে অযুর পরে কালেমা শাহাদাত পড়া অথবা ফরজ নামাজের পরে আয়াতুল কুরসী পড়া অথবা যানবাহনে উঠার দোয়াটা নিয়মিত পড়া কিংবা ছোট, বড় সবাইকে নিয়মিত সালাম দেয়ার অভ্যাস তৈরি করাসহ অসংখ্য ছোট ছোট সুন্নাহ।
সবশেষে রমজানের মধ্যে ডেডলাইন আছে এমন কোন অতিরিক্ত পরিশ্রমে কাজ আগেই করে ফেলার অথবা কাজ এগিয়ে রাখার চেষ্টা করা। যেমন কারো প্রজেক্ট প্রপোজাল/পেপার বা থিসিস পেপার অথবা আর্টিকেল কিংবা অন্য যেকোন কিছু।
এছাড়া যারা শারীরিক পরিশ্রমের কাজ করেন তাদের সবসময়েই উচিত তবে রমজানের আগে এবং পুরো মাস জুড়ে স্বাস্থ্যকর খাবারের দিকে বিশেষ মনযোগ দেয়া। বিশেষ করে ইউরোপের উত্তর গোলার্ধের দেশগুলোতে রোজাগুলো যেহেতু প্রায় ১৫-১৬ ঘন্টার বেশিই হয়ে থাকে।
পারিবারিক প্রস্তুতি, পরিকল্পনা ও আমল
পরিবার যেহেতু সমাজের প্রধান প্রতিষ্ঠান, সেটা হোক শিক্ষা, প্রশান্তি কিংবা ইসলামী মুল্যবোধ প্রতিষ্ঠায় সেহেতু অন্যান্য সবসময়ের মতই রমজানেও পরিবারকে নিয়ে একটা বড় আনন্দময় প্রস্তুতি ও পরিকল্পনা থাকা উচিত। বিশেষ করে ছোট ছোট নিস্পাপ সম্ভাবনাময় মুসলিম শিশু-কিশোরদের মন ও মানস গঠনের জন্য তা আরো জরুরী।
রমজানের কিছুদিন আগে থেকেই আনন্দ ও ফজিলতপূর্ণ আলোচনায় পরিবারে রমজানকে স্বরণ করা ।
উপরের তথা ব্যক্তিগত পর্বে বর্ণনা করা পরামর্শগুলো যেগুলো ভাই,বোন, স্ত্রী, সন্তানদের জন্য প্রযোজ্য সেগুলোর ব্যাপারে সবার মধ্যে একটা আনন্দময় উৎসাহ তৈরি করার চেষ্টা করা যেতে পারে।
এসব ক্ষেত্রে সন্তান অথবা ভাই-বোনদের বয়সের সক্ষমতা অনুসারে বিভিন্ন ইবাদতের টার্গেট ঠিক করে দিয়ে প্রতিযোগিতার মত করে এবং ঈদের দিনে ওদের পছন্দের নানা পুরস্কার দেয়ার ঘোষনা দেয়া যেতে পারে এবং পরবর্তীতে আনন্দঘন পরিবেশে তার বাস্তবায়ন। যেমন তাহাজ্জুদ চ্যালেঞ্জ, সূরা মুখস্ত, বেসিক সূরা ও দোয়ার অর্থ মুখস্ত বা দোয়া মুখস্ত কিংবা বয়সানুসারে ছোট ছোট গল্পের ছলে সাহাবী, নবী রাসূলদের জীবনী থেকে শুরু করে ইসলামের প্রাথমিক বিষয় নিয়ে সুন্দর সাহিত্য পাঠ, ভিডিও দেখা সহ যার যার বাস্তবতা অনুসারে প্রতিযোগিতা বা টার্গেট ঠিক করে দেয়া যেতে পারে। তবে এক্ষেত্রে তাদের সাথে বোঝাপড়া ও তাদের মানসবোঝা টা জরুরি, নয়তো হিতে বিপরীত হতে পারে। বিশেষ করে যারা দেশের বাইরে থাকেন তারা এসব বিষয়কে ফ্রেন্ডলি ভাবে, গল্পচ্ছলে ও খেলাধূলারমত করে বুঝিয়ে এবং সহজভাবে নিতে হবে।
একইভাবে পরিবারের প্রাপ্তবয়স্করাও টার্গেট করে উপরে বর্নীতগুলো অথবা এর বাইরে যেকোন সাওয়াবের কাজ করার চেষ্টা করে ঈদ পরবর্তীতে সবাই মিলে নিজেরা নিজেদের ট্রিট দিয়ে আনন্দ করা যেতে পারে। যেমন হয়তো স্পেশাল রান্না কিংবা সবার জন্য ছোট ছোট গিফট অথবা একসাথে কোথাও ঘুরতে যাওয়া। যা পরিবারের মধ্যে বিশেষ করে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে প্রশান্তি, সম্মান আর ভালোবাসাকে আল্লাহর ইচ্ছায় অন্য মাত্রায় উন্নিত করতে পারে।
বাসায় অবসর সময়গুলো তে অথবা বাচ্চাদের অবসরে বেশি করে তেলাওয়াত, ইসলামি গান, আবৃত্তি, কার্টুন, মুভি ক্লিপ ছেড়ে রেখে বছরের অন্যসময়ে না পারা ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক পরিবেশ তৈরি করা যা পরিবারের সাংস্কৃতিক অভ্যাসকে নতুন মোড়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করবে।
সুযোগ হলে বাচ্চাদের বা পরিবারকে নিয়ে একসাথে সাহরী ও ইফতার করার চেষ্টা করা এবং উভয় সময়ে রমাদানের মহত্ত ও করনিয় নিয়ে হালকা ও প্রশান্তিময় আলোচনার চেষ্টা করা।
যাদের সুযোগ আছে পরিবারের সবাই মিলে একসাথে মসজিদে জামাতে যাওয়া এবং যাদের সুযোগ নেই তারা একসাথে বাসায় জামাত পড়া। নিজের অবর্তমানে বাচ্চা কিংবা ভাই-বোনদের জামাতে নামাজ পড়া ও পড়ানোর ব্যাপারে শিখানো ও উৎসাহ দেয়া।
সুযোগ হলে দু/একবার বাচ্চাদের হাত দিয়ে ফিতরার টাকা দান করানো এবং ফিতরার ফজিলত সম্পর্কে বুঝিয়ে বলা। সম্ভব না হলে অন্তত বিষয়টা সম্পর্কে শিশুসুলভভাবে বুঝিয়ে বলা। এক্ষেত্রে যাকাতের ব্যাপারটি নিয়েও আলোচনা হতে পারে।
সবশেষে একটা পবিত্র, সুন্দর ও আনন্দময় ঈদের প্রস্তুতি নিন। রমজানের শেষ দিক থেকেই ঈদের অসাধারণ সব গানগুলো বাসায় লাউড স্পিকারে ছেড়ে দিয়ে ঈদের আমেজ নিয়ে আসুন। মনে রাখবেন, পুঁজিবাদের মূল অস্ত্র কিন্তু এই চাকচিক্য ও বিনোদন। সুতরাং আমাদের উৎসবগুলোকেও অলংকারময় ও আনন্দপূর্ন করে তুলতে হবে। সাধ্যমত পরিবারের জন্য কেনাকাটা করুন এবং আমাদের চীরচারিত সংস্কৃতি অনুসারে ঈদের দিনে কিছু ভাই-বোনদের বাসায় দাওয়াত করুন। আপনি পৃথিবীর যে প্রান্তেই থাকুন না কেন ঈদের দিনটিতে ছুটি নেয়ার চেষ্টা করুন। সবাই মিলে একসাথে ঈদের নামাজ পড়ুন এবং মুসলিম ভাইবোনদের সাথে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করুন। তা হতে পারে পর্দা মেনে গেট টুগেদারের মাধ্যমে, বাসায় বাসায় যাওয়ার মাধ্যমে অথবা কোথাও ঘুরতে যাওয়ার মাধ্যমে।
সামাজিক প্রস্তুতি, পরিকল্পনা ও আমল
একজন আদর্শ ব্যক্তি তথা মুখলিস মুমিন গড়ার প্রত্যয়ে ইসলাম যেহেতু সমাজকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয় সেহেতু আমাদের সামাজিক কিছু দায়িত্ব ও রয়েছে। তা হতে পারে ফ্রেন্ড সার্কেল বা প্রতিবেশি অথবা কলিগদের মধ্যে।
দেশ বা দেশের বাইরে যত ব্যস্তই থাকুন না কেন পরিচতজন, দেশি বা এলাকার ভাই-বোনেরা অথবা অফিসে কিংবা বন্ধুদের নিয়ে ছোট করে হলেও ইফতার মাহফিলের আয়োজন করা। চাইলে তাতে আগ্রহী অমুসলিম বন্দুকেও দাওয়াত দিতে পারেন। এসব মাহফিলে ছোট করে হলেও নিজে বা কোন যোগ্য জনের দ্বারা রোজার গুরুত্ব, সারা বছরের জন্য শিক্ষা, বিজ্ঞান নিয়ে আলোচনা করা। এর বাইরে ইসলামের সামগ্রিকতা, পুরো বছরজুড়ে মৌলিক ইবাদত সমূহ পালন ও নিষেধসমূহ স্মরন করে দেয়া।
আপনার যে বন্ধু-ভাই,বোনদের সাথে সবসময় দুষ্টুমি, আসা-যাওয়া করেন তাদের কে রোজা উপলক্ষ্যে হলেও রোজা রাখা অথবা ইসলামের মৌলিক বিষয় নিয়ে সাধ্যমত বলার চেষ্টা করা। যে ম্যাসেঞ্জার গ্রুপটিতে সবসময় দুষ্টমি করেন সেই গ্রুপটিতেও রোজা উপলক্ষ্যে বলতে পারেন অথবা তাদের মানসিকতা অনুসারে শেয়ার করতে পারেন আলেম বা স্কলারদেও ইসলামের বিভিন্ন আলোচনা। একই বিষয় করা যেতে পারে মুসলিম কলিগদের ক্ষেত্রেও।
যাদের আসে পাশে মসজিদ আছে তথা মসজিদের সাথে যাদের নিয়মিত আসা-যাওয়ার সম্পর্ক, তারা রমজান উপলক্ষ্যে মসজিদ পরিচালনা পরিষদের সহযোগিতা অথবা অনুমতি নিয়ে শিশুদের নিয়ে প্রতিযোগিতা ও আকর্ষনীয় পুরস্কারের আয়োজন করতে পারেন। তা হতে পারে জামাতে নামাজ আদায় চ্যালেঞ্জ, রোজা রাখা চ্যালেঞ্জ অথবা ইফতার করানো চ্যালেঞ্জ কিংবা পারিবারিক পয়েন্টে বর্ণনাসহ অন্য যেকোন উদ্যোগ। এটি ঐ মসজিদকে কেন্দ্র করে মুসলিম কম্যুনিটিকে আরো একাত্ম করবে।
সাধারণত এটি অধিকাংশ জায়গাতেই হয়ে থাকে তবুও যদি আপনার মসজিদে না হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে মসজিদের পরিচালনা পরিষদের সাথে কথা বলে ভাই/বোন ও শিশুদের জন্য সহিহ কুরআন তেলাওয়াতের প্রশিক্ষনে ব্যবস্থা করা যেতে পারলে অনেক ভালো হবে। যারা যারা শিখবে সবার পক্ষ থেকে সাওয়াব আপনার কাছে পৌঁছাবে ইনশাআল্লাহ (৪)।
যারা দেশের বাইরে থাকছেন তথা মাল্টি রিলিজিয়াস সোসাইটিতে বসবাস করেন তারা বন্ধু ও কলিগদের সামনে প্রকাশ করুন আপনার রোজার কথা। এ নিয়ে গল্প করুন, এর শিক্ষা, বিধান, বিজ্ঞান নিয়ে আলাপ করুন। হয়তো এই আলাপ ও তাকে আকর্ষণ করে তুলতে পারে ইসলাম নিয়ে। কে জানে, সেই আকর্ষণ তাকে খুঁজে দিতে পারে হেদায়েতের পবিত্র উপত্যকায়। আর এর মর্যাদা কী অথবা আল্লাহর কাছে এর কত বেশি পুরস্কার তা তো আর বলার অপেক্ষা রাখেন।
এর বাইরে আপনার বাস্তবতা, যৌক্তিকতা ও প্রয়োজনানুসারে ইসলামের মৌলিকত্বের লঙ্ঘিত হবে না এমন যেকোন কিছুই করা যেতে পারে। কারণ সৃজনশীলতার ছড়াছড়ির এই যুগে ইসলামকে যতটা আকর্ষনীয় করে তুলতে পারবো ততটাই ইসলাম বিকশিত হবে তার আপন আলোয়। হয়তো সবমিলে অনেক কঠিন বা অনেক বেশি কিছু মনে হতে পাওে কিন্তু চিন্তা করলেই দেখা যাবে যে এ সবই শুধু একটু মাথায় নেয়ার কাজ, তাহলেই দৈনন্দিন জীবনের অন্যান্য কাজের মত এসব আমলও সম্পন্ন হয়ে যাবে। আর যেহেতু জান্নাতের সুগন্ধময় রাইয়্যান দরজা অপেক্ষা করে সফল রোজাদার জন্য সেহেতু কিছুটা বিশেষ করে তো নিতেই হবে তাই না (৫)!
আল্লাহ আমাদের সকলকে এই রমজানের পরিপূর্ণ প্রস্তুতিসহ, রাসূল (সঃ) এর অনুকরনে আমলের গভীরতায় নিজেদের গুনাহ মাফ করিয়ে নেয়ার তৌফিক দান করুন, আমিন।
তথ্যসুত্র:
১: সহীহ মুসলিম, হাদীস ১১৫১/১৬৫
২: সহিহ বুখারি, হাদিস ১৮১৫; সহিহ মুসলিম, হাদিস ২৫৭০
৩: সাপ্তাহিক রোজা: নাসাঈ ২৩৬০; তিরমিযী ৭৪৫, আইয়্যামে বিজের রোজা: আবু দাউদ ২৪৪৯, বুখারী ১৯৮১
৪: সহিহ মুসলিম ৪৩১০
৫: সহিহ বুখারি ৩০১৭
COMMENTS