“ আল্লার সেপাই তিনি দুঃখীদের রাজা। যেখানে আজান দিতে ভয় পান মোমেনেরা , আর মানুষ করে মানুষের পূজা , সেখানেই আসেন তিনি। ...
“আল্লার
সেপাই তিনি দুঃখীদের রাজা।
যেখানে
আজান দিতে ভয় পান
মোমেনেরা,
আর
মানুষ করে মানুষের পূজা,
সেখানেই
আসেন তিনি। খিলজীদের শাদা ঘোড়ার সোয়ারি।”
বাংলার
ইতিহাসে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোর একটি বখতিয়ারের বঙ্গবিজয়।
তেরশো শতাব্দীর সূচনালগ্নে অর্থাৎ ১২০৫ সালের ১৯
রমজান মাত্র সতেরোজন সওয়ারী নিয়ে অত্যাচারী সেনরাজের
দরজায় দস্তক দেন বখতিয়ার।
বখতিয়ারের
আগমনের পূর্বে বাংলার সর্বময় ক্ষমতায় জেঁকে বসেছিল গণশত্রু আর্য দুর্বৃত্তরা। সংখ্যাগরিষ্ঠ
বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী মানুষেরা ছিলেন নিপীড়িত-নিষ্পেষিত। আর যারা শান্তির
আশ্বাসে আর্যদের আনীত ধর্ম স্বীকার
করে নিয়েছিলেন তাদেরও ছিলো না আত্ম-অধিকার। পরাজিতের গ্লানি নিয়ে বাংলার মানুষ
মুক্তির আশায় দিন গুজার
করছিলেন। যেমনটা রামাই পণ্ডিত তার শূন্যপুরাণের 'নিরঞ্জনের
উষ্মা' কবিতায় লিখেছেন— ‘মনেত পাইআ
মম্ম সবে বোলে রাখ
ধর্ম্ম/তোমা বিনা কে
করে পরিত্তান।' অর্থাৎ, নিপীড়িত মানুষেরা প্রভু নিরঞ্জনের কাছে কেঁদে কেঁদে
প্রার্থনা জানাত। বলত, 'হে ধর্মঠাকুর, তুমি
ছাড়া আমাদের এই অমানুষিক অত্যাচার
থেকে আর কে বাঁচাবে?'
এই
নিপীড়িত মানুষদের নিজ ভাষায় করা
আকুতি-মিনতি আল্লাহ যেন শুনেছিলেন আরশ
থেকে। তাই তো প্রেরণ
করেন তুর্কি যোদ্ধা ইখতিয়ারউদ্দিন মোহাম্মদ বিন বখতিয়ার খিলজীকে।
মুসলমান বিজয়ের উচ্ছ্বসিত তারিফ করেছেন রামাই পণ্ডিত। তিব্বতীয় বৌদ্ধ ভিক্ষু লামা তারানাথ লিখেছেন,
ব্রাহ্মণ্য অত্যাচার ও নির্মূলের শিকার
বৌদ্ধরা বিজয়ী মুসলমানদের অভিনন্দিত করেছিল। তারা বখতিয়ারকে বঙ্গ
অধিকারে সাহায্যও করেছিল।
বখতিয়ারের
বঙ্গবিজয়ের মধ্য দিয়ে বাংলার
রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অর্থাৎ
সর্বাঙ্গিক মুক্তি অর্জিত হয়। বাংলার ইতিহাস
ছিল আধিপত্যবাদী আর্য আগ্রাসনের বিরুদ্ধে
দুর্বার প্রতিরোধ গড়ে তোলার, সেই
প্রতিরোধের অংশীদার হয়েই যেন এগিয়ে
এসেছিলেন বখতিয়ার খিলজী। খিলজীদের সাদা ঘোড়ার সোয়ারি।
বঙ্গবিজয়ের
ফলে ইসলামের ন্যায় ও ইনসাফের ধারণা
বাংলায় প্রবেশ করে। বর্ণপ্রথা আর
মানুষের ওপর মানুষের দেবত্ব
তথা খোদায়ী সমূলে উৎপাটিত হয়। এর রেশ
ধরেই বৌদ্ধরা দলে দলে ইসলামের
কালিমাখচিত পতাকাতলে আশ্রয় নিতে থাকে। ফুলে
ফলে সুশোভিত হয়ে নিপীড়িত এই
মানুষগুলোর নিষিদ্ধ ভাষাটিই বাংলা নামে তার আত্মঅধিকার অর্জন করে। বখতিয়ার খিলজীর
নেতৃত্বে ইসলামের প্রেরণায় নতুন রাষ্ট্র গঠিত
হয়। এর ধারাবাহিকতায় এক
শতাব্দীর মধ্যেই সমগ্র বাংলা মুসলমানদের অধিকারে আসে। মুসলমানদের হাত
ধরেই বাংলা পরিণত হয় জান্নাতাবাদে। নবাবী
শাসনের অবসান অব্দি বাংলা ছিল বিশ্বের সবচেয়ে
ধনী রাষ্ট্র।
১৯
রমজান মোতাবেক ১০ মে এই
মহান বিজয়ের গৌরবদীপ্ত দিন। এই দিনটিকে
তাই খোশ আমদেদ জানাতে
ভুলবেন না। আসুন, পূর্ব
পুরুষের মুক্তির এই দিনটি উদযাপন
করি। সকলে পালন করি
"বঙ্গ বিজয় দিবস"।
এই
দিনটাকে আমাদের ভবিষ্যত বঙ্গের জাতীয় উৎসবে পরিণত করার লক্ষ্যে প্রচারনা
ও কর্মসূচী চালাতে হবে। তাই পোস্ট
টি কপি, পেস্ট ও
শেয়ার করে ছড়িয়ে দেয়ার
অনুরোধ রইলো।
COMMENTS